Thursday 28 January 2016

বন্ধু হে আমার...


৯-ই জানুয়ারি। সারেগামাপার গ্র্যান্ড ফিনালে হচ্ছে টিভিতে। এক বন্ধু মেসেজ করে বলল, “তোরা গাঙ্গুলি পরিবার একাই অনুষ্ঠানটার TRP তুলে দিলি। ফুল ফ্যামিলি মিলে দেখেই চলেছিস সেই কবে থেকে।”
*****************************************

বিয়ের পর তিনটে জিনিষে সব থেকে বেশি মন খারাপ হতো আমার।

১) পুরীর পথে জগন্নাথ এক্সপ্রেসের TT আমাদের টিকিট চেক করছেন। বাকি তিনজনের পদবী ‘গঙ্গোপাধ্যায়’।

২) মা আর আমি গড়িহাটের (গড়িয়াহাট) অটোয় বাড়ি ফিরছি। তারাতলায় এসে মা নামছে। আমার একটা পা প্রায় অটোর তলায় জীবনানন্দ হওয়ার জোগাড়। সম্বিৎ ফিরল। আমিও ফিরলাম বেহালায়।

ভাই আর আমি কোথাও গেলে, ও যখন ওই গলিটায় ঢুকে যায়, পথের পাঁচালির রেল গাড়ির দৃশ্যটা ভাসে আমার চোখের সামনে। দুই ভাই বোনের কাশবনের মধ্যে দিয়ে ছুটে যাওয়ার দৃশ্য। তারপর অপুর একা একা রেলগাড়ি দেখা।

৩) বিয়ের নেমন্তন্নের কার্ডগুলো। শ্রী বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সপরিবার। খুব অবাক হতাম যখন মনে মনে আমি ভেবে ফেলেছি কি শাড়ি পরব আর মা বলতো, ‘তোর নেমন্তন্ন নেই। মুখটা ওরম করিস না। বিয়ে হয়ে গেলে অনেকেই মেয়েদের বলেনা। যা প্লেটের দাম!’ আবার মনে মনে শাড়িটা ভাঁজ করে আলমারিতে তুলে রাখতাম আমি। (আর চারটে পান কম খাওয়া হবে সেই সিজেনে – এই ভেবে দুঃখে মূর্ছা যেতাম)।
********************************************

আমি শুরুতে সারেগামাপা খুব একটা দেখতাম না।

মহাভারত, জননী আর জন্মভূমির শুরুর গানটা যেমন নিজের টিভি না চালিয়েও পাড়াপড়শিদের দৌলতে শোনা যেত, সারেগামাপাও ঠিক তেমনি। অন্যের টিভির “অ্যালার্মে” বোঝা যেত এবার টিভি খোলবার পালা। এমনিতে টিভি দেখবার অভ্যাস না থাকলেও, “সবাই বাড়ির দোর গোড়ায় বোতল ভরা বেগুনি জল ঝুলিয়ে রাখছে – আমিও ঝোলাব” এই রকম একটা মনোভাব নিয়ে রিমোট হাতে বসে পড়তাম টিভির সামনে - সোম, মঙ্গল, বুধের মধ্যে অন্তত একটা দিন। 

তারপর একদিন আমার মেসো শ্বশুরমশাই ফোন করে খুব বকলেন, আমি সারেগামাপা দেখছি না বলে। উনি যদি আমার শ্বশুরমশাই হতেন এবং আমরা এক বাড়িতে থাকতাম, তাহলে আমাদের কথোপকথনটা হতো খানিক এরকম–

উনি- সারেগামাপা দেখছিলে না কেন?
আমি – একটা কাজ ছিল।
উনি - হেল উইথ ইয়উর কাজ। সারেগামাপাটা যে আধ ঘন্টা হয়ে গেল, তুমি না দেখায় তাদের TRP কমে যে লোকশান হয়ে গেল, তার জন্য দায়ী হবে কে? তুমি?
আমিদেবব্রত সেন, “পড়ম্পড়া” - এসব আমার ভালো লাগে না। আর, সারেগামাপা দেখাটাই জীবনের সব নয়
উনি - ও তাই বুঝি বাড়িতে এসেও অফিসের কাজ করে বেড়াও, লোকশানটা গায়ে লাগে না। Irresponsible! Worthless!
(বাথরুমে ঢুকে হাত মুছে এসে)
উনি  - সারেগামাপা না দেখে তুমি কি করছিলে?
আমি – অফিসের কাজ করছিলাম।
উনি - কাজ! তুমি টিভি না দেখে কাজ কর?
Strange! সারেগামাপা না দেখে কেউ কাজ করতে পারে এ আমার জানা ছিল না। তোমাকে আমাদের বাড়ির বউ বলে পরিয় দিতে আমার লজ্জা করে
আমি - কি বলছেন আপনি?
উনি - হ্যাঁ হ্যাঁ। ঠিক বলছি।
আমি - কাজ সম্বন্ধে এ ধারণা আপনার ভুল। সপ্তাহে তিন দিন রোজ দেড়-দু’ ঘণ্টা সময় আপনি সারেগামাপা দেখে কাটাচ্ছেন। টিভি না দেখে কাজ করবার মতো মনের অবস্থা আপনার নেই
ঊনি - Really? তা এই সারেগামাপা-দেখা লোকটার শেলটারটি ছেড়ে কাজ সম্বন্ধে বড় বড় লেকচার দিলে ভালো হয়না?
আমি - তা হলে আপনি বলতে চান যে সারেগামাপা না দেখলে আপনার শেলটারে থাকা চলবে না!
উনি - বলতে চান নয়।  বলছি।
[ওপরের কথোপকথনটি কাল্পনিক হলেও, ওনার বকুনিটি একদম আসল]
************************************************

আমি দেখলাম, যে কোন পারিবারিক ‘get-together–এ, অধিকাংশ whatssap group-এ এবং চা বা মদের আড্ডায় একটাই আলোচনা। সারেগামাপা। অনুষ্ঠান চলাকালীন, আমার দেওর মনে মনে দত্তক নি অদ্রিজ আর সৌম্যকে, আমার ভাই নিজের স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি দলিল করে লিখে দিয়েছিল দুর্নিবারের নামে, আমার এক বন্ধুর ভবিষ্যৎ বানী – “দীপন ছাড়া কেউ জিতলে কান কেটে বাণের জলে দেব”…এই সবকিছু দেখে মনে হল, ‘ভদ্র সমাজে’ থাকতে হলে, সোম, মঙ্গল, বুধ সাড়ে নটায় টিভি খোলা ছাড়া উপায় নেই।

চপ-মুড়ি-বেগুনি, ক্যারম বোর্ড, ক্লাবে আড্ডা, তাস, অলি-পাবের গুলতানি, পিটার ক্যাট আর মোক্যাম্বোর বাইরে র‍্যাশন দোকানের লাইন দেওয়ার মাঝে, বাঙ্গালিদের সন্ধ্যেবেলাগুলোকে নতুন একটা দিক দিয়েছে সারেগামাপা। আর আমায় দিয়েছে বাবা, মা আর ভাইয়ের সঙ্গে “একসাথে টিভি দেখার আনন্দ”...অন্য বাড়িতে থেকেও।
********************************************************

তারপর একদিন সারেগামাপা শেষ হয়ে গেল “all good things come to an end–এর নিয়ম মেনে।

পুরীর চারটে টিকেটের একটায় অন্য পদবী, মায়ের পাঁচটা স্টপেজ আগে নেমে যাওয়া আর বিয়ে বাড়ির নেমন্তন্নে আমার নাম বাদ পরার দুঃখ কত সহজে ভরিয়ে দিয়েছিল ওই একটা জিনিষ। 

যেদিন সারেগামাপা শেষ হয়ে গেল, কি ভীষণ কষ্ট হয়েছিল আমার। চোখের জল অসভ্যের মতো “আপন বেগে পাগল পারাহয়ে আমার দুই গালে। সারেগামাপা শেষ না হলে আমি বোধহয় কোন দিন বুঝতেই পারতাম না, যে একটা গোটা অনুষ্ঠান আমি গান শোনার থেকেও বেশি করে দেখতাম ‘আমরা চারজন এক সঙ্গে টিভি দেখছি’-র লোভে।   
************************************************************

সারেগামাপার চলে যাওয়ার রুদালি-দৃশ্যের যবনিকা পতন হল “দাদাগিরি” নামক টিস্যু-বাক্সে।

‘আমরা চারজন এক সঙ্গে টিভি দেখছি’ (আলাদা বাড়িতে থেকেও) – এটাকে জিয়িয়ে রাখছে “দাদা”। আমাদের নিউ আলিপুরের ঘরটা অদৃশ্য একটা অটোয় চেপে, পাঁচটা স্টপেজ পেরিয়ে, কোন এক মন্ত্রবলে ধরা দিচ্ছে আমার কাছে। মনের কোন এক কোণায় একটা বড় খাট রাখা আছে আমার (তাতে গড়িহাটের শিবানীর বেড কভার)। সেই খাটে বাবা, মা, ভাই আর আমি সোম থেকে বুধ রাতে “দাদাগিরি” দেখি। এক সাথে।
*********************************

কত মহাপুরুষ জীবনের কত রকম মানে বলে দিয়ে গেছেন।

আমার কাছে জীবন মানে ...Zee বাংলা।


Sunday 24 August 2014

Womaniya....

They stood on the terrace, their bodies entwined in each other’s. Their clothes hung helplessly from their bodies like office goers would from Bus No.42B every morning on their way to work. His nose buried itself in the smoothness of her skin and tresses. Her right ear was almost in his mouth and words poured incessantly into it, making her heart melt like a Marie biscuit, dipped in a cup of hot tea. It was perfect. They were perfect.

The conversation continued. He talked. (With her heart in her mouth, she chose not to take the chance). While looking beyond the terrace, he whispered, “If there’s any woman who comes close to her in terms of beauty, it would be you.”


So, she was the second most beautiful woman in his life. Virgo women! They had their ways.  (With a Sagittarian’s wicked sense of humour, abundant use of sarcasm, acute absence of poise and compulsive clumsiness, what better results did she expect?)

“Just look at her! You agree?” 
   
She looked at her. And, a part of her changed that day. She didn’t feel jealous for the first time in her life when he praised another woman so ruthlessly.

She pulled his mouth in hers and whispered, “I do.”
********************************



Happy Birthday, Calcutta. You are indeed the most gorgeous woman on this planet. 
***********************************

Monday 21 July 2014

নদীর ওপার


“শেষ দিনটা কেমন ছিল পুরনো অফিসে?” – প্রশ্নের মধ্যে লুকনো ‘চুপ করে কেন, একি বেলা! তুমি কাঁদছ?’

চোখ পিটপিট করলাম, ওপর দিকে তাকালাম, জলের বোতলে ঢক ঢক করনে লাগা। কিন্তু চোখের জল আর দরদ দুটোই উথলে নদী আপন বেগে পাগল পারা। “সাধে বলি, তোর favourite হলিডে স্পট নদীর ওপার? খবরদার মন খারাপ করবি না।”

মন খারাপের সুইচ বোর্ডটার কাছে বেশির ভাগ সময়ই আমার বয়েস পাঁচ। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে লম্বা হওয়ার চেষ্টা, তবুও সুইচে হাত পৌঁছয় না। শেষে রুলার বা হাত-পাখার পেছন দিকটা দিয়ে আলো জ্বালানো।

মন খারাপ হল ছোট বেলার সুইচ বোর্ড। ইচ্ছে মত কি আর বন্ধ করা যায়?

**********

বাবা ভাবতো ফক্স অ্যান্ড মণ্ডল থেকেই বোধহয় আমি রিটায়ার করব। এত ভাল জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়া আর রেল লাইনে গলা দেওয়া....এই দুটোর মধ্যে দ্বিতীয়টা ঢের ভাল। বাবাকে খুব খুব অবাক করে আমি পুরনো অফিস ছেড়ে দিলাম একদিন।

আজকালকার দিনে চাকরি ছাড়া কোন বড় ব্যাপার নয়। এরম লোক চিনি যারা বছরে দুবার চাকরি বদল করেছে। এই যুগে তাদের পাশে আমি আলিপুর চিড়িয়াখানার “অদ্বৈত”। সেই জন্যেই গলা ভার আর চাপা আনন্দ। আর বেশ খানিকটা আদেখলামি। (নতুন অফিস যাব বলে আমার মেসো-শ্বশুর নতুন জামা কিনে দিয়েছেন, বাবারা ব্যাগ আর পেন। এমনি এমনি শেষের শব্দটা লিখিনি!)

*******************

এক মাসের বেশিই হয়ে গেছে ওই পাড়া, ওই অফিস ছেড়েছি আমি। তবুও, এখনও, বিয়ের ঠিক পর পর গড়িয়াহাট থেকে অটোয় ফেরার দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। নিউ আলিপুরে পৌঁছে অটোওয়ালা বলতেন, “আপনার স্টপেজ এসে গেছে, দিদি।” আমার সম্বিত ফিরত। বলতাম, “না বেহালায় যাব তো!” উত্তরে শুনতাম, আমি নাকি অটোয় ওঠার সময় নিউ আলিপুর বলেছি।

এই ভুল যে কতদিন করেছি মনে নেই। যখন লজ্জা করত, মাকে মনে পড়তো। মা এখনও মাঝে মাঝে আমার বাপের বাড়ি আসা প্রসঙ্গে বলে, “ফুলবাগানে কখন আসবি?” কিছু অভ্যেস বিছানার চাদরে নেল পালিশের দাগ। উঠতেই চায় না।

আমি এখনও মাঝে মাঝে “আমাদের অফিস” বলে পুরনো অফিসটাকে বোঝাই। আর তখন নতুন কলিগদের সামনে কি পরিমাণ অপ্রস্তুত হই কি বলবো! এই ভুলে এত বার জিভ কেটেছি, যে কালি ঠাকুর কম্পিটিশনে নামলে, খুব বাজে ভাবে হেরে মনোজ কুমারের মতো মুখ লুকোতেন।
আসলে অভ্যেস। বদ অভ্যেসও বলা যেতে পারে।

*************

নতুন চাকরি পাওয়ার আনন্দ খানিকটা হয়েছে সেটা সত্যি। টাকা পয়সা মন্দ না, কর্তার অফিস থেকে ঢিল ডিউস বল-ছোঁড়া দূরত্ব, শনিবার ছুটি। অনেকগুলো নারকোলের পুর-ভরা পাটিসাপটার মধ্যে হঠাৎ একটা ক্ষীরের। ভাল খারাপ জানি না। স্বাদ বদল তো বটেই।

নতুন অফিসের প্রথম সপ্তাহের শেষে, ও জিজ্ঞেস করলো, “কেমন লাগছে তোর নতুন অফিস?”
-      
   -অন্যরকম।

“কিরকম অন্যরকম শুনি” ...
-     
   - প্রথম যেদিন ঝালমুড়ি আনালাম, খুব অস্বস্তি হল। হাই কোর্ট পাড়ার মুড়ি মানেই cause list-এর পাতা দিয়ে বানানো ঠোঙা। সেটায় চোখ সোয়ে গেছে। অন্য প্রিন্টের পাতা দেখে কিরম অদ্ভুত লাগছিল!












“এটাতেও খাওয়া টেনে আনলি? আর?”
-    
-      - এখানে মাটির ভাঁড়ে চা পাওয়া যায়না। CCD-র মেশিন আছে। চা ভাল। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে গুলতানি আর চা শেষ হয়ে গেলে ভাঁড়ের ধারগুলোয় দাঁত বসানোটা নেই।












“আর?”  

-     -  কুকি জার, ফ্রেঞ্চ লোফ আছে। কিন্তু Bakery বিস্কুট আর বাপুজি কেক নেই।

“পুরো নদীর-ওপার syndrome রে। নেই নেই করে গলা শুকনো! পেটুক কোথাকার! কি আছে সেটা বল?”

-      - ক্ষেতে ফসল আছে, গাছে ফুল আছে, ফল আছে, পাখি আছে...শান্তি আছে, সুখ আছে। *চিন্ময় রায়ের মতো করে*

এর পর আর কথা এগোয় না। এক রাশ হাসি দমকা হওয়ার মতো এসে কথার মাঝখানে ঢুকে পড়ে আর সব এলোমেলো করে দেয়।

****************








ফুল আছে, ফল আছে বলতে মনে পড়ল। এই অফিস শুরু হয় দেরীতে। কর্তাকে অফিস পৌঁছে আমার দু’হাত ভরতি সময় থাকে। ওই সময়টা আমার নিজের। একদম নিজের। মেট্রোরেল-জীবনে কিছুক্ষণের জন্য ট্রাম কোম্পানির সুখ। বই পড়ি, হেঁটে চারিদিক ঘুরে বেড়াই, ছবি তুলি, কোন নতুন কাফে চোখে পড়লে গলা ভিজিয়ে আসি, বেল ভিউএর লেকটার ধারে বসে মাছ আর মানুষ দেখি অপলক। এর মধ্যে সবথেকে আনন্দের জিনিসটা হল নানান গাছপালা আর ফুল চেনা। গাছ দেখলেই আমার এই বাড়ির বাবার কথা মনে হয়। বাজার থেকে বাবা ফিরেছে; আমার কৌতূহলঃ ‘কি কিনে আনলে?’ উত্তরঃ ‘মায়ের হরলিক্স, মুড়ি আর দুটো গাছ।’ এক রাশ অক্সিজেন ভরা একটা উত্তর।








আর একজনের কথাও মনে পড়ে। আমার এক দিদি। শিলিগুড়িতে থাকে। খুব গাছ ভালবাসে। বেশির ভাগ ছবিই তার জন্য তোলা। এরম একদিন ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো কদম গাছ। খুব একটা দেখি না তো আজকাল, তাই অদ্ভুত আনন্দ হল। উপরি পাওনাঃ মাটিতে দুটো ফুল পড়েছিল। হাতে নিয়েই ভাইয়ের কথা মনে হল। ছোটবেলায়, স্কুলে পড়তে মা ওকে কতবার এভাবে চুল কাটিয়ে দিয়েছে!













আমার অফিসে ঢোকার মুখে এই গাছটা আছে। কাঠগোলাপ এমনিতে ডিমের পোচ। সাদা-হলুদ। কিন্তু এটা ক্যান্ডিফ্লস। বুড়িমার মিষ্টি চুলের মতো মন ভাল করা গোলাপি আভা।

পূর্ণেন্দু পত্রির একটা কবিতা পড়েছিলাম। সেটা খানিক এরমঃ
“তবে কলকাতার এখন ডায়াবেটিস।
কলকাতার ইউরিনে এখন বিরানব্বই পার্সেনট সুগার।
কলকাতার গলব্লাডারে ডাঁই ডাঁই পাথর।
গাছপালা খেয়ে আগের মতো হজম করতে পারেনা বলে
কলকাতা এখন মানুষ খায়...।”

সত্যি হয়তো গাছপালা খেলে গুরুপাক হয় শহরের। কারণ, আমার যাওয়া-আসার পথে এখনও প্রচুর সবুজ দেখতে পাই।

আগের অফিসের দুদিক দিয়ে শুধুই বাড়ি। গাছ বলতে, পুরনো বাড়ির ইটের পাঁজর ফুঁড়ে সবুজ বিপ্লব। এখানে একটা বড় জানলা আছে। অনেকখানি আকাশ আর অনেকখানি সবুজ দেখা যায় জানলার পাশে দাঁড়ালে।




আর ছাদে উঠলে দেখা যায় ফ্লাই ওভার।




*******************

নতুন কাজের জায়গা নিয়ে নানান বলছি যখন, তখন এটা না বললেই নয়। এই প্রফেশন আমার কাছে খানিকটা prostitution এর মতো। মাইনে নেব, কাজ করব। সোজা হিসেব। প্যাশন নেই। “A woman can fake orgasms”– এর নিয়ম মেনে, ভাল কাজ হলে, বড় ডিল সাইন হলে খুশিও হবো। এই ল ফার্মটি যদি জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেয়, কলারটা কান অবধি তুলে, শিষ দিতে দিতে বাড়ি ফিরবো। কিন্তু ওইটুকুই। কাজে ঝাঁপ দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হবো, এরম ইচ্ছে বা আগ্রহ কোনটাই আমার নেই। তাই কাজের থেকে কাজের জায়গায় লোকজন কেমন, পরিবেশ কেমন সেটা নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক বেশি।

এই অফিসে লোকজন দারুণ এটা বলার সময় হয়তো আসেনি। কিন্তু একটা ঘটনা না বললে অন্যায় হবে।

হাই কোর্ট পাড়ায় কত ভালো খাবার পাওয়া যায়...এই গল্প ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো আমি বাজাতাম প্রথম ক’দিন। দ্বিতীয় সপ্তাহে এক সহকর্মী আমায় cause list দিয়ে বানানো একটা ঠোঙ্গা দিল। তাতে টেম্পল চেম্বারের (আমরা বলতাম ছ’নম্বর) শিঙ্গাড়া! খয়েরি পুরে ঠাসা ‘হিন্দুস্তানি দোকানের’ শিঙ্গাড়া। কেউ এত কম আলাপে, মনে রেখে এটা করতে পারে, আমি সত্যিই ভাবিনি। “Kya kahoon mein apse doston…meri toh aankh bhhar ayi hein *Satyameva Jayate-তে আমির খানের মতো গলা করে*

*******************

এটা বলতে গিয়ে মন আবার ফ্ল্যাশ ব্যাক মোডে। আগের অফিসের এক দাদা মিটিং ফেরত নাহুমসের দেড় টাকা দামের মটন শিঙ্গাড়া আনত আমাদের জন্য। সঙ্গে ব্রাউনি। রামজানের সময় আলিয়া থেকে হালিম!

আর একজন অফিসের কাজে দিল্লি গেলেই, রাশি রাশি শাওয়ার জেল, শ্যাম্পু আর লোশন।
পাঁচ তারা হোটেলের এই শাওয়ার জেলগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সাবান গায়ে মাখার পর জল দিয়ে ধুলে খুব সহজে চলে যায়। কিন্তু এগুলো অনেক ধোওয়ার পরও কেমন যেন গায়ে লেগে থাকে।

ঋতুপর্ণ ঘোষের একটা লেখায় উনি বলেছিলেন, যে লেসার অপারেসানে চোখের দৃষ্টি সংশোধন করানোর পর উনি আর চশমা পরতেন না। প্রথম প্রথম মনে হত যেন জামা কাপড় না পড়ে বাড়ি থেকে বেরছেন। চশমায় এতটাই অভ্যস্ত উনি। নানান মুহূর্তে অতর্কিতে ওঁর হাত চলে যেত চশমার জায়গায়। তাই শেষে উনি লিখলেন...

“আমি এখনও চশমা পরি।
মনে মনে।”
  
বিয়ের পর বাঁ হাতে লোহা পরতাম বলে, ঘড়িটার হাত বদল হল। বহুদিন অবধি সময় দেখতে গেলে বাঁ হাতটা উঠে আসতো।

এটা বোধহয় স্বাভাবিক। ঘড়ি, চশমা ছাড়াও আর অনেক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

এমনকি কাজের জায়গাতেও।